শিম চাষ পদ্ধতি - শিম গাছের রোগ ও প্রতিকার
ভূমিকা
কৃষি এবং কৃষির সাথে যুক্ত সকলকেই শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের এই কনটেন্ট লেখা শুরু করছি। আজ আমি আলোচনা করব বারি সীম ৮ চাষ পদ্ধতি বা রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে বারি সীম ৮ চাষ পদ্ধতি বা রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা নিয়ে। নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।
শিম চাষ পদ্ধতি
শিম চাষ পদ্ধতি: সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শিম উৎপাদনের গাইডলাইন
শিম একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর সবজি। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায়ই শিম চাষ করা হয়। স্বাদিষ্ট এই সবজিটি চাষ করতে চান? আসুন জেনে নিই শিম চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি।
মাটি ও জমি প্রস্তুতি:
- মাটি: দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি শিম চাষের জন্য উপযুক্ত।
- জমি প্রস্তুতি: চাষের আগে জমি ভালোভাবে চাষ করে লেভেল করে নিতে হবে।
বীজ বপন:
সময়: আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
পদ্ধতি:
সারিতে বপন:
- সারিতে বপনের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ১৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
মাদায় বপন:
- মাদায় বপনের ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি ১০ কেজি বীজ যথেষ্ট।
বীজ ভিজানো:
বীজ বপনের আগে ১০-১২ ঘণ্টা বীজ ভিজিয়ে রাখা ভালো।
সার প্রয়োগ:
মাদা তৈরির সময়:
- গোবর ১০ কেজি, খৈল ২০০ গ্রাম, ছাই ২ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম মিশিয়ে মাদায় প্রয়োগ করতে হবে।
- চারা গজালে:
- ১৪-২১ দিন পর পর দু'কিস্তিতে ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম করে এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যা:
নিড়ানি: মাঝে মাঝে নিড়ানি দিয়ে জমি আলগা করে দিতে হবে।
সেচ: শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হবে। তবে গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে।
বাউনির ব্যবস্থা: গাছ যখন ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।
রোগ-বালাই প্রতিরোধ:
- শিমের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ মোজেইক ও অ্যানথ্রাকনোজ।
- চারা অবস্থায় পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা ও লাল ক্ষুদ্র মাকড় ক্ষতিকর।
- ফুল ফোটলে থ্রিপস এবং ফল পেকে এলে শিমের গান্ধি পোকা ক্ষতি করতে পারে।
- প্রয়োজনে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
ফসল সংগ্রহ:
- আশ্বিন-কার্তিক মাসে ফুল হয়।
- ফুল ফোটার ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়।
- শিম ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে ফল দেয়।
ফলন:
প্রতি শতকে ৩৫-৭৫ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ১০-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
মনে রাখবেন:
বিভিন্ন জাতের শিমের চাষ পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তাই আপনার এলাকার কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
উন্নত জাতের শিম বীজ
উন্নত জাতের শিম বীজ: উচ্চ ফলন ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা
উন্নত জাতের শিম বীজ ব্যবহার করে আপনি কম সময়ে বেশি ফলন পেতে পারেন। এই বীজগুলো সাধারণত রোগবালাই প্রতিরোধী, উচ্চ ফলনশীল এবং ভালো স্বাদের হয়ে থাকে।
উন্নত জাতের শিম বীজের সুবিধা:
- উচ্চ ফলন: এই বীজ থেকে সাধারণত বেশি পরিমাণ শিম পাওয়া যায়।
- রোগবালাই প্রতিরোধী: অনেক উন্নত জাতের শিম রোগবালাই প্রতিরোধী হয়ে থাকে, ফলে কীটনাশক ব্যবহার কমাতে সাহায্য করে।
- ভালো স্বাদ: এই বীজ থেকে উৎপাদিত শিম সাধারণত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হয়।
- বিভিন্ন পরিবেশে খাপ খায়: অনেক জাতের শিম বিভিন্ন ধরনের মাটি ও আবহাওয়ায় খাপ খেয়ে যায়।
উন্নত জাতের শিম বীজের ধরন:
বাংলাদেশে বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বীজ কোম্পানি দ্বারা উন্নত জাতের শিম বীজ উৎপাদিত হয়। কিছু জনপ্রিয় জাতের মধ্যে রয়েছে:
ইপসা শিম-১ ও ইপসা শিম-২:
- এই দুটি জাত আলোক অসংবেদনশীল, অর্থাৎ সারা বছরই চাষ করা যায়।
Dolichos-3, SARPAN-3:
- খাটো জাতের শিম, দ্রুত ফলন দেয়।
অন্যান্য: বিভিন্ন বীজ কোম্পানি আরো অনেক উন্নত জাতের শিম বীজ বাজারজাত করে।
উন্নত জাতের শিম বীজ কেনার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়:
বিশ্বস্ত বীজ কোম্পানি:
- সবসময় বিশ্বস্ত বীজ কোম্পানি থেকে বীজ কিনুন।
জাতের তথ্য:
- বীজ কেনার আগে জাতের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।
প্যাকেট:
- বীজের প্যাকেট সঠিকভাবে সিল করা আছে কিনা তা পরীক্ষা করুন।
বীজের গুণগত মান:
বীজের গুণগত মান পরীক্ষা করার জন্য কয়েকটি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভালো বীজ ডুবে যাবে।
উন্নত জাতের শিম বীজ ব্যবহার করে আপনি নিশ্চিতভাবে উচ্চ ফলন ও গুণগত মানের শিম উৎপাদন করতে পারবেন।
শিম গাছের রোগ ও প্রতিকার
’বারি সীম ৮’ একটি উচ্চ ফলনশীল শীতকালীন জাত। এটি অন্যান্য চাষযোগ্য সীমের তুলনায় ২০-৩০ দিন আগে সংগ্রহ করা যায়। সীম নরম, মাংসল ও আঁশ কম। সীম সবুজ লম্বা, কিছুটা বাকানো। বীজ আকারে বড়।
শিম চাষ পদ্ধতি - রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা
বৈশিষ্ট্য :
’বারি সীম ৮’ একটি উচ্চ ফলনশীল শীতকালীন জাত
এটি অন্যান্য চাষযোগ্য সীমের তুলনায় ২০-৩০ দিন আগে সংগ্রহ করা যায়।
সীম নরম, মাংসল ও আঁশ কম।
সীম সবুজ লম্বা, কিছুটা বাকানো।
বীজ আকারে বড়।
পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমন কম।
উপযোগী এলাকা : সারা দেশে চাষ উপযোগী
বপনের সময় :
- আগষ্ট- সেপ্টেমবর মাস
মাড়াইয়ের সময়:
- নভেমবর মাসের প্রথমেই সীম সংগ্রহ করা যায়
ফলন:
- গড় ফলন ২২.৫ টন/হেক্টর
রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা
রোগবালাই: এনথ্রাকনোজ বা ফলপঁচা
দমন ব্যবস্থা:
১। রোগমুক্ত ভাল বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ব্যাভিষ্টিন/ নোইন বা একোনাজল আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করতে হবে।
৩। খাওয়ার শিমে ছত্রাকনাশক না উত্তম।
শিম চাষ পদ্ধতি - রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা
পোকামাকড়: জাব পোকা, সীমের ফল ছিদ্রকারী পোকা, থ্রিপস পোকা
দমন ব্যবস্থা:
জাব পোকা: শিম গাছের রোগ ও প্রতিকার
১। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়।
২। নিম বীজের দ্রবন (১ কেজী পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবান গুলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমন অনেকাংশে কমানো যায়।
৩। স্বল্পমেয়াদী বিষ ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক, যেমন- ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি: লি: হারে অথবা পিরিমর ৫০ ডিপি প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সীমের ফল ছিদ্রকারী পোকা
৪। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা ও ঝরা ফুল, ফল ইত্যাদি সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলা।
৫। আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে অমত্মঃবাহী বিষ ক্রিয়া সম্পন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে।
থ্রিপস পোকা: শিম চাষ পদ্ধতি - শিম গাছের রোগ ও প্রতিকার
১। পাঁচ গ্রাম পরিমান গুড়া সাবান প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পাতার নীচের দিকে স্প্রে করতে হবে।২। ক্ষেতে সাদা রঙের ৩০ সে:মি: ৩০ সে:মি: আকারের বোর্ডে পাতলা করে গ্রীজ বা আঠা লাগিয়ে কাঠির সাহায্যে ৩ মিটার দুরে দুরে ‘‘আঠা’’ ফাঁদ পেতে থ্রিপস পোকা আকৃষ্ট করে মারা যায়।
৩। আক্রমনের হার অত্যন্ত বেশী হলে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২মি: লি: পরিমান) স্প্রে করতে হবে।
শিম চাষ পদ্ধতি - সার ব্যবস্থাপনা
সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ (কেজি / হেঃ)
শিম গাছের পরিচর্যা
শিম গাছের পরিচর্যা: সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শিম উৎপাদনের গোপন কৌশল
শিম চাষ করতে গিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো এর যথাযথ পরিচর্যা। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে আপনি উচ্চ ফলন এবং সুস্বাদু শিম পেতে পারেন। আসুন জেনে নিই শিম গাছের পরিচর্যার বিস্তারিত নির্দেশাবলী।
নিড়ানি ও গাছ ছাঁটাই:
- নিড়ানি: নিয়মিত নিড়ানি দিয়ে জমি আলগা করে দিতে হবে। এতে মাটিতে বাতাস চলাচল ভালো হয় এবং আগাছা দমন হয়।
- গাছ ছাঁটাই: অসুস্থ বা ক্ষতিগ্রস্ত শাখাগুলো কেটে ফেলতে হবে। এতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং রোগবালাই ছড়ানোর ঝুঁকি কমে।
সেচ:
- নিয়মিত সেচ: শিম গাছকে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। তবে জমিতে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না।
- শুষ্ক মৌসুমে: শুষ্ক মৌসুমে মাঝে মাঝে জমি ভিজিয়ে রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ:
মূল সার: চারা রোপণের সময় বা বীজ বপনের সময় গোবর সার, কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে।
পাকের সময়: ফুল ফোটার পর পটাশ সার প্রয়োগ করলে শিমের উৎপাদন বাড়ে।
রোগবালাই দমন:
- মোজাইক রোগ: এই রোগে আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে দিতে হবে।
- অ্যানথ্রাকনোজ: এই রোগের জন্য কপার অক্সি ক্লোরাইড স্প্রে করতে হবে।
- পোকা: পোকা দমনে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
বাউনির ব্যবস্থা:
গাছ যখন কিছুটা বড় হবে তখন বাঁশের ডগা বা অন্য কোন উপকরণ দিয়ে বাউনির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এতে শিমের ডালগুলো ভালোভাবে বাড়তে পারবে।
ফসল সংগ্রহ:
- শিমের ফুল ফোটার প্রায় ২০-২৫ দিন পর ফসল সংগ্রহ করা যায়।
- নিয়মিত ফসল সংগ্রহ করলে গাছ আরো শিম দেয়।
মনে রাখবেন:
বিভিন্ন জাতের শিমের পরিচর্যা পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। তাই আপনার এলাকার কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া উত্তম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url