বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা - রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা

বিশ্বের সকল  কৃষি এবং কৃষির সাথে যুক্ত সকলকেই শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের এই কনটেন্ট লেখা শুরু করছি। আজ আমি আলোচনা করব বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা বা রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা  নিয়ে।

বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা - রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা
হ্যাঁ আজকে আমি সঠিকভাবে বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা বা রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা   নিয়ে আলোচনা করব। এই লেখার মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।

বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা 

বৈশিষ্ট্য : শীতকালে চাষযোগ্য। উচ্চ ফলনশীল। গাছ লম্বাকৃতি। ফল সুস্বাদু। ফল মাঝারী আকৃতির এবংডিম্বাকার। পাকা অবস্থায় ফলের রং হলুদাফ লাল হয়। জীবনকাল ৭০-৮০ দিন। ফলন গড় ফলন ৯০-৯৫ টন।

উপযোগী এলাকা  :  বিনা টমেটো-১২ রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা 

প্রায় সব ধরনের জমিতেই বিনাটমেটো-১১ চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। যেহেতু টমেটোর গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না তাই পানি জমে থাকে না এরম্নপ জমি নির্বাচন করতে হবে।

বপনের সময়  : বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা 

আগাম শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের প্রথম হতে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বীজতলা তৈরী করতে হবে। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য আশ্বিন মাসে বীজতলা তৈরী করতে হবে। আর নাবী শীতকালীন চাষাবাদের জন্য মাঘ মাসে বীজতলা তৈরী করতে হবে।

বীজতলা তৈরীর সময়ঃ  বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা 

আগাম শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র মাসের প্রথম হতে তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে বীজতলা তৈরী করতে হবে। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য আশ্বিন মাসে বীজতলা তৈরী করতে হবে। আর নাবী শীতকালীন চাষাবাদের জন্য মাঘ মাসে বীজতলা তৈরী করতে হবে।

বীজতলা তৈরীঃ বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা 

আগাম শীতকালীন চাষাবাদের জন্য ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বৃষ্টি হয় বিধায় টিনের তৈরী ট্রেতে বীজতলা তৈরী করতে পারেন অথবা সাদা পলিথিন ছাউনির ব্যবস্থা সাপেক্ষে মাঠে বীজতলা তৈরী করতে পারেন। তবে বীজতলা অবশ্যই ভূমি হতে ৬-১০ ইঞ্চি উঁচু হতে হবে এবং বীজতলা চারিপার্শে ড্রেনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। 
শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন চাষাবাদের ক্ষেত্রে বীজতলা উপর ছাউনির দেয়ার প্রয়োজন নেই। অনেক ক্ষেত্রে টমেটোর বীজ বপন করার পর পিপঁড়ায় বীজ নিয়ে যায় ফলে অঙকুরোদগম কম হয়। তাই সর্তকতা স্বরুপ বীজতলায় সেভিন ডাস্ট কীটনাশক ছিটিয়ে দিলে ঝুকি থাকে না।

পরিচর্যাঃ বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা 

জমির অবস্থাভেদে প্রয়োজনবোধে গাছে হালকা সেচ দিতে হবে। আগাছা হলে নিড়ানী দিয়ে হালকাভাবে আগাছা পরিস্কার করতে হবে একই সময় মাটি ঝুরঝুরে করে দিতে হবে।
  • চারা লাগানোর ১৫-২০ দিন পর বাঁশের তৈরী কাঠি দ্বারা ঠেকনা দিতে হবে অথবা খড়/কচুরিপানার দ্বারা মারচিং করে দিতে হবে। তবে গ্রীষ্মকালে চাষাবাদের ক্ষেত্রে খড়/কচুরিপানার দ্বারা মালচিং করা যাবে না।
  • মাড়াইয়ের সময়: ৭০-৮০ দিন। 
  • বপন/ রোপনের দূরত্ব: ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা রোপনের উপযুক্ত। সারি হতে সারি এবং গাছ হতে গাছের দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার হতে হবে। চারা লাগানো সংগে সংগে পানি দিতে হবে। 
চারা লাগানোর প্রথম ২৪ ঘন্টায় কমপক্ষে ৩ বার চারার গোড়ায় পানি দিলে সবচেয়ে ভাল হয়। জমিতে পর্যাপ্ত ড্রেনের ব্যবস্থা্ থাকতে হবে যাতে সেচ বা বৃষ্টির পানি জমে থাকতে না পারে।
ফলন: ফলন গড় ফলন ৯০-৯৫ টন।

রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থা - বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

রোগবালাই:
দমন ব্যবস্থা: ভাইরাস রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি স্প্রে করতে হবে। এ ব্যবস্থা প্রথম ফল পাকার পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখতে হবে। পাতা পঁচা রোগ (লেইট ব্লাইট) থেকে গাছকে রক্ষার জন্য ফুল আসার ঠিক পূর্ব থেকে ১৫ দিন অন্তর অন্তর তিনবার ডাইথেন-এম ৪৫ অথবা রিডোমিল এমজেড অনুমোদিত মাত্রা অনুসারে প্রয়োগ করতে হবে। 
টমেটোর গাছ ঢলে পড়া রোগ (উইল্ট) থেকে রক্ষার জন্য ক্ষেতের মাটি যাতে সেতসেতে না থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা - বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

পোকামাকড়:
  • দমন ব্যবস্থা: বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা 
  • এ জাতটি অনুমোদিত হওয়ার পূর্বে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তেমন কোন ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ঘটেনি।
  • টমেটোর ফলছিদ্রকারী পোকা, পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা
দমন ব্যবস্থা: বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা 
সাদা মাছি পোকা : রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা 
১। সহনশীল জাত যেমন বারি উদ্ভাবিত টিএলবি ১৩০, টিএলবি ১৮২ চাষ করা।
২। এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি পাতার নীচের দিকে স্প্রে করা।
৩। বীজতলা মশারীর নেট দিয়ে ঢেকে রাখা।
৪। হলুদ রংয়ের ফাঁদ ব্যবহার করা।
৫। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি পরিমাণ) অথবা এডমায়ার ২০০ এস এল (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি পরিমাণ) মিশিয়ে স্প্রে করা। তবে ঘন ঘন কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এর ফলে এ পোকা কীটনাশকের প্রতি দ্রুত সহনশীলতা গড়ে তোলে।

টমেটোর ফলছিদ্রকারী পোকা : বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

১। পাকা সহ আক্রান্ত ফল হাত বাছাই করে মেরে ফেলা।
২। এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করা।
৩। সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা।
৪। আক্রমণের হার অত্যন্ত বেশী হলে সাইপারমেথ্রিন ৪০ ইসি জাতীয় কীটনাশক (প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি পরিমাণ) স্প্রে করা।

পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা: রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা 

১। আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।
২। আঠাল হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করে এদেরকে আকৃষ্ট করে মেরে ফেলা।
৩। নিমতেল ৫ মিলি + ৫ মিলি ট্রিকস্ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে পতায় স্প্রে করলে এ পোকার আক্রমণ হ্রাস পায়।
৪। আক্রমণের তীব্রতা বেশী হলে সবশেষ হিসেবে অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করা।

রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা - সার ব্যবস্থাপনা

টমেটোর জন্য গোবর সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথেষ্ট পরিমাণ গোবর সার না দিলে ফলন অর্ধেক হতে পারে। একরে সারের পরিমাণ হলোঃ ইউরিয়া ১৩০ কেজি, টিএসপি ১১০ কেজি, এমপি ১০০ কেজি এবং গোবর ৪-৫ টন। শেষ চাষের সময় নির্ধারিত পরিমাণ গোবর ও টিএসপি এবং অর্ধেক পরিমাণ এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকী এমপি চারা লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ ফুল আসার সময় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সমান দুভাগ করে চারা লাগানোর ১৫ ও ৪০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।

আজ আমি বিনা টমেটো-১২ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা বা রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোজনা করা হলো। পরবর্তীতে আরো ভালো কোন টপিক নিয়ে আলোচনা করব। লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url